ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা, উদাসীন থাকার সুযোগ নেই

Passenger Voice    |    ১১:৩৪ এএম, ২০২৪-০৫-০৫


ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা, উদাসীন থাকার সুযোগ নেই

জয়দেবপুর রেলস্টেশনের ঢাকামুখী আউটার সিগন্যাল (কাজীবাড়ী) এলাকায় শুক্রবার দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রেন দুটির ইঞ্জিনসহ নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।

তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে ট্রেনের চার চালক (লোকোমাস্টার) আহত হয়েছেন। স্বস্তির বিষয়, ট্রেনটিতে ওই সময় যাত্রী না থাকায় বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ট্রেনটিতে যাত্রী থাকলে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারত।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, সিগন্যালম্যানের ভুলের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইল কমিউটারের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। এ ঘটনায় কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কোনো দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষকে নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়; অনেক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর সব তৎপরতা থেমে যায়। তদন্ত কমিটির সুপারিশ আলোর মুখ দেখে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। শুক্রবারের ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা কাটানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে, এটি উদ্বেগজনক। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনটি বিভিন্ন দেশেই ঘটে থাকে। কিন্তু অবহেলাজনিত ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের দেশে রেলের কর্মীদের অবহেলার কারণেই বারবার ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেনের লাইনচ্যুতি, ভুল সিগন্যাল, কর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা-এসব অনেকটা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ অরক্ষিত রেলক্রসিং। বিষয়টি নিয়ে যেন সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সমন্বিত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সারা দেশে দুই হাজারের বেশি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ। গেটম্যান নেই অনেক রেলক্রসিংয়ে। বৈধ বা অবৈধ ক্রসিংগুলো বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এমন অবস্থায় এলজিইডির আওতায় পল্লি সড়ক নেটওয়ার্কে অবস্থিত অবৈধ, অরক্ষিত ও চরম বিপজ্জনক রেলক্রসিংগুলোর অপসারণ বা ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুটি সংস্থার মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। অবৈধ ক্রসিং এবং নিরাপত্তাহীন গেটের কারণে ট্রেনের গতি দিন দিন কমছে। এজন্য সমাপ্ত হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের সুফলও যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

সম্প্রতি দাবদাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন বেঁকে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। রেলসংশ্লিষ্টরা এ পরিস্থিতির জন্য সূর্যের তাপের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। অনেক দেশে সূর্যের তাপ এর চেয়ে বেশি হলেও সেসব দেশ থেকে রেললাইন বাঁকা হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেললাইন বেঁকে যাওয়ার কারণ রোদের তাপ নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও ত্রুটি। গত দেড় দশকে রেলে বিপুল অঙ্কের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও রেলের জরাজীর্ণ লাইন ও সেতু উন্নয়নে বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে না। জীর্ণ রেল সেতু দিয়ে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। চুরি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করা দরকার। এসব বিষয়ে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই।

প্যা.ভ/ত